অন্যান্য

কী দেখে বিমা পলিসি কিনবেন

আর্থিক ঝুঁকি নিরসনের উপায় হিসেবে কাজ করে জীবন বিমা। পলিসি করার অন্যতম কারণ হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা দেওয়া। পলিসিগুলো সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। চাহিদা ভেদে বিভিন্ন ধরনের বিমা পলিসি রয়েছে। যেমন আছে মেয়াদি বিমা। এর সুবিধা শুধু মৃত্যু বা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে পেয়ে থাকেন গ্রাহকেরা। এ ধরনের পলিসির প্রিমিয়াম হার কম হয়ে থাকে। এ ছাড়া অনেকে সঞ্চয় ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা—এ দুয়ের সমন্বয়েও বিমা পণ্য কিনতে পারেন।

ক্রেতাকে প্রথমেই ভাবতে হবে তার ওপর পরিবারের কতজন নির্ভরশীল মানুষ আছে। এরপর ভাবতে হবে কোনো দুর্ঘটনা বা মৃত্যুতে পরিবারের কী পরিমাণ আয়ের প্রয়োজন, বৃদ্ধ বয়সেই বা কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। মাসিক ভিত্তিতে পেনশন আকারে গ্রাহক অর্থ পেতে চান কি না, তাও চিন্তা করতে হবে। এসব বিষয় বিবেচনা করে বিমা পলিসি ও বিমার সময়কাল নির্বাচন করতে হবে। বিমা এজেন্টের কথার ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর না করে বরং তার সহযোগিতা নিয়ে এসব বিষয় বিশ্লেষণ করে বিমার চাহিদা ও পরিমাণ নির্ধারণ করা প্রয়োজন। আরও যেসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে, সেগুলোর সম্পর্কে বলা যেতে পারে।

১. নিজের আর্থিক সক্ষমতা যাচাই

বিমা অঙ্ক বড় হলে তার প্রিমিয়ামও বেশি হয়। দেখা যায় যে আর্থিক অবস্থা ভালো থাকার সময় অনেকে বড় অঙ্কের বিমা পলিসি কিনেছেন, কিন্তু পরে তা আর চালিয়ে নিতে পারছেন না। দীর্ঘমেয়াদি বিমা পলিসি কেনার ক্ষেত্রে তাই ভবিষ্যৎ আর্থিক সামর্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। এমনভাবে বিমা অঙ্ক নির্ধারণ করতে হবে যাতে প্রিমিয়ামের পরিমাণ সব অবস্থায় নাগালের মধ্যে থাকে।

২. সঠিক বিমা পলিসি নির্বাচন

কোনো গ্রাহক যদি শুধু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার (দুর্ঘটনা বা মৃত্যুতে প্রদেয় সুবিধা) জন্য বিমা সুবিধা নিতে চান, তাহলে মেয়াদি বিমা গ্রহণ করা উত্তম। কারণ এ ধরনের পলিসির প্রিমিয়াম হার প্রচলিত অন্যান্য বিমার তুলনায় অনেক কম থাকে। অন্যদিকে ঝুঁকি ও সঞ্চয় উভয় সুবিধা–সংবলিত বিমা পণ্যের প্রিমিয়াম হার বেশি হয়ে থাকে। সুতরাং আর্থিক সামর্থ্য ও ব্যক্তির চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে সঠিক বিমা পরিকল্প নির্বাচন জরুরি।

৩. বিমা কোম্পানি বাছাইয়ে দক্ষতা

বিমা কোম্পানি নির্বাচন বা বাছাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বভাবতই যে কোম্পানির বিমা দাবির পরিশোধ হার ভালো, সে কোম্পানি নির্বাচন করাই উত্তম। প্রশ্ন হলো, এ তথ্য কোথায় পাওয়া যাবে? বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে প্রচুর তথ্য রয়েছে। কোম্পানির নাম লিখে ওয়েবসাইটে খোঁজ করলে তথ্য পাওয়া যায়, যা সম্মিলিতভাবে কোম্পানি নির্বাচনে অনেক সহযোগিতা করবে। কোম্পানিগুলোর বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন গ্রাহকের প্রচুর রিভিউ বা মতামত রয়েছে। এখান থেকেও কোম্পানি সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায়।

৪. সঠিকভাবে ফরম পূরণ

বিমা পলিসি ক্রয়ের জন্য পলিসি ফরম পূরণ করতে হয়। উক্ত ফরমে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের তথ্যও লিখতে হয়। তা ছাড়া নমিনিও নির্বাচন করতে হয় এবং শেষে সই দিতে হয়। ফরম পূরণ আবশ্যিকভাবে সঠিক হতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে তা ঝামেলার কারণ হতে পারে।

৫. মিথ সম্পর্কে ধারণা

বিমায় বিনিয়োগকে অনেকে ব্যাংকের এফডিআরের সঙ্গে তুলনা করেন, যা ঠিক নয়। অনেকে মনে করেন মৃত্যুতেই কেবল বিমা সুবিধা পাওয়া যায়। এটাও ভুল ধারণা। অনেক তরুণ মনে করেন তাদের বিমা পণ্যের প্রয়োজন নেই। কিন্তু সব বয়সীদের জন্যই জীবন বিমা প্রযোজ্য। তরুণদের জন্য বরং প্রিমিয়াম হার অনেক কম থাকে।

বিমা পলিসি কেনার পর গ্রাহককে অবশ্যই বিভিন্ন বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন—যথাসময়ে প্রিমিয়ামের অর্থ ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতিতে জমা দিতে হবে। গ্রাহককে অবশ্যই বিমার সব তথ্য ও জমার রসিদ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রয়োজনে স্ক্যান করে গুগল ড্রাইভে সংরক্ষণ করা যায়। এসব দিক বিবেচনা করে বিমা পলিসি কিনলে বিমার প্রকৃত সুবিধা পাওয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button